রান্নার গ‍্যাসের দাম বৃদ্ধি বিজেপির বঙ্গ জয় এর পথে বড় বাধা হতে পারে বলে আশঙ্কা

24th April 2021 9:49 pm বর্ধমান
রান্নার গ‍্যাসের দাম বৃদ্ধি বিজেপির বঙ্গ জয় এর পথে বড় বাধা হতে পারে বলে আশঙ্কা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : ফের বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠনের পক্ষেই কি ভোট দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলাবাসী। নাকি, বর্ধমানবাসী আসল পরিবর্তনের পক্ষেই ঢলে পড়েছেন।  এর উত্তর
পাওয়ার জন্য ২মে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতেই হবে।তবে জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করছে,এবারের বিধানসভা নির্বাচনটা আদতে   উন্নয়নের আঙ্গিনায় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে দুর্গ দখলে রাখার লড়াই।যে লড়াইয়ে তৃণমূলকে ’সাথ’ দিতে পারে রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গৃহস্থ পরিবারের মহিলাদের ক্ষোভ । যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন , ‘যা না হয়েছে উন্নয়ন, তার থেকে বেশি হয়েছে  অনিয়ম আর কাট মানির আগমন’। তার প্রতিবাদেই বর্ধমানবাসী এবার আসল রায়  দিয়েছেন আসল পরিবর্তনের পক্ষেই । রাজ্যের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলাকে এক সময়ে বলা হত বামেদের দূর্গ। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের পর সেই বাম  দূর্গ ভেঙে খানখান হয়ে যায়।তার পরথেকে জেলার গ্রাম গ্রামান্তর ,শহর, মফশ্বল সব জায়গা থেকে কাস্তে- হাতুড়ি- তারা কার্যত বিলিন হয়ে যায়।সেই জায়গার দখল নেয় ‘ঘাস ফুল’। এরপর থেকে প্রায় ৮ বছর এই জেলায় কোনও বিরোধী দল তাদের অস্তিত্ব টুকু সেইভাবে  জানান দিতে পারেনি।কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়ানোয় এই জেলাতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল ঘটে যায় ।এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফায় সম্পন্ন হয়েছে এই জেলার ১৬ আসনে বিধানসভা  নির্বাচন। এবারের বিধানসভা নির্বাচন তাই জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ’দুর্গ’ দখলে রাখার লড়াইয়ে পরিণত হয়ে ওঠে। আর বিজেপির নেতা , কর্মী ও সমর্থকরা তৃণমূলের হাত থেকে ’দুর্গ’ ছিনিয়ে নেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় ।   গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে ’পদ্ম’ ফোটে ।তবে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে ’ঘাস ফুলের’ আধীপত্য বজায় থাকলেও তা বেশী দিন টেকে নি।বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে জয়ী হওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডল ২০২১বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিতে যোগ দিয়েদেন ।তার পর থেকেই ‘ঘাস ফুলের‘ দুর্গে থাবা বসায় ’পদ্ম’ শিবির।  পঞ্চম দফায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় যে ৮টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন হয় তার মধ্যে ৭ টি আসনেই গত বার জিতেছিল তৃণমূল। শুধু মাত্র ’জামালপুর’ বিধানসভা আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরেছিল বামেরা। আর ষষ্ঠ দফায় জেলার বাকি যে আটটি আসনে নির্বাচন হয় তার মধ্যেও ’পূর্বস্থলী উত্তর’ বিধানসভা আসটি বাদে বাকি  ৭ টি আসনই দখলে ছিল তৃণমূলের ।তাই তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে এবারের  বিধানসভা নির্বাচনটা ছিল ’ঘাস-ফুল দূর্গ ’দখলে রাখার  বড়  চ্যালেঞ্জের। জেলার  ৪০ লক্ষাধীক ভোটার দু’দফার ভোটে নির্ধারণ করে দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান ’ঘাস-ফুলের’ দূর্গো হয়েই থাকবে,না কি এই জেলা ’পদ্ম’ শিবির দখলে চলে যাবে । 
২০১৬ সালের  বিধানসভা নির্বাচনে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় ভোটার সংখ্যা ছিল ৫৬,৭২,৭৩০ জন । তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ছিল ২৯,৫৮,৭৪৮ জন এবং মহিলা ভোটার ছিল ২৭,৩৮,১৪১ জন ।সেবার বর্ধমান জেলায় ২৫ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল প্রার্থীরা ১৯ টি আসনে জয়ী হয় ।আর বামেরা ৫টি আসনে ও কংগ্রেস ১ টি আসনে  জয়ী হয় । বিজেপি সেবার খাতা খুলতে পারে নি। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল  বর্ধমান জেলা ভাগ হয় । তার পর এবার ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমান জেলার ১৬টি বিধানসভা আসন মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০,৩৫,৪২৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০,৪৭,৯২৪ জন, আর মহিলা ভোটার ১৯,৮৭,৪১৫ জন।এই মহিলা ভোটাররাই এবারের বিধানসভা ভোটে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । ভোটের আগে তৃণমূল হোক কিংবা বজেপির মিটিং ,মিছিল ও জনসভায় মহিলাদের  অংশ গ্রহন ছিল চোখে পড়ার মতোন । তৃণমূলের দুর্গ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ,অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী পূর্ব বর্ধমানে একাধীক জনসভা,রোড শো করেছেন । পিছিয়ে থাকেনি তৃণমূল কংগ্রেসও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরুকরে তৃণমূলের যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় , অভিনেতা দেব সহ অন্য বলিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা এই জেলায় বিজেপি বিরোধী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন ।জনসভার মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সব হেভিওয়েট নেতা নেত্রীরা যখন রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে স্বোচ্চার হন তখন  হাত তুলে চিৎকার করে তাতে সায় দেন সভায় উপস্থিত থাকা মহিলারা ।এমনকি বিভিন্ন বিধানসভা এলাকাতেই রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এলাকার মহিলাদের প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায় ।এর উত্তর বিজেপি নেতারা সেভাবে দিতে পারেন নি। তারা শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ,অপশাসন ,তোলাবাজি , সিন্ডিকেট রাজ এইসব অভিযোগ এনে  শুর চড়ান । তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুধুই দুর্নীতির  অভিযোগ তুলে গলা ফাটিয়ে বিজেপি নেতারা  যে হেঁসেলে রান্নার গ্যাসের টান পড়ে যাওয়া মহিলাদের ক্ষোভ বিক্ষোভ মেটাতে পেরেছেন তা মনে করছেন না রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে ,রান্নার গ্যাস নিয়ে সাধারণ গৃহস্থ পরিবারের মহিলাদের ক্ষোভ যে মাত্রায় পৌছেচে সেটাই বিজেপির বাংলা জয়ের স্বপ্ন অধরা করে দিতে পারে । পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ এই প্রসঙ্গে বলেন , ’শুধু রান্নার গ্যাস আর পেট্রোল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিই নয় ।  কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের সাধারণ মানুষের হিতার্থে কোনও কাজই করেনি । বিজেপি সরকার শুধু আদানি আম্বানিদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে আর সাম্প্রদায়িক  বিষ ছড়াচ্ছে । মমতা যে সাধারণ নাগরিক ও  মহিলাদের জন্য প্রভূত উন্নয়ন কাজ করেছেন । তা  বাংলার মহিলারা ভালো ভাবেই জানেই ।  ভোটে বিজেপিকে তারা যোগ্য জবাব দিয়ে দিয়েছেন।বাংলায় ফের মমতা দিদিই মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ’।  জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় যদিও পাল্টা জবাবে জানিয়েছেন , ’বাংলায় রান্নার গ্যাসের দাম তৃণমূল সরকারতো কমাতে পারতো ।  কমায় নি কেন ? আর তৃণমূলের উন্নয়নের গল্প ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই নয় । উন্নয়নের নামে শুধু অনিয়ম আর কাটমানি খাওয়া চলছে । এছাড়াও সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে ১০ বছরের তৃণমূল রাজত্বে । পূর্ব বর্ধমানের মহিলা ও পুরুষ ভোটারা তাই আসল পরিবর্তনের পক্ষে উজার করে ভোট দিয়ে দিয়েছেন ।শ্যামলবাবু  দাবি করেন ,এবার তৃণমূলের বিদায়  শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র’। 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।